বিদায় অনুষ্ঠানের জন্য সুন্দর বক্তব্য

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম।

মঞ্চে উপস্থিত প্রধান অতিথি প্রফেসর মোঃ নুরুল আবসার চৌধুরী এবং আমার শ্রদ্ধেয় সকল শিক্ষক ও আমার সামনে উপস্থিত সকল শিক্ষার্থীবৃন্দ, আমার পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সালাম জানাই।
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। আদাব।

বিদায়ঃ
মায়া, মমতা আর ভালবাসা নিয়েই আমরা পৃথিবীতে বেঁচে থাকি। তাই আমরা যে পরিবারে, যে সমাজে জীবন যাপন করি, তার প্রতি আমাদের মায়া জন্ম নেয়। আর এই মায়া কাটিয়ে চলে যেতে আমাদের খুবই কষ্ট হয়। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলে মানুষ। এইতো সেদিন আমরা এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলাম। গুনতে গুনতে আজ ৪টি বছর পার করে ফেলেছি। আজো আমার চোখে ভাসে সেদিনের কথা যেদিন এই প্রতিষ্ঠানে এসেছিলাম। আজ কত তাড়াতাড়ি আমাদের বিদায়ের দিন চলে আসলো । বিদায় নিতে চাইছে না এই মন্তব্য, কিন্তু বিদায় নিতে হচ্ছে। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে আজ অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে। আজ শিক্ষাজীবনের একটি অধ্যায় সমাপ্ত করে পরের আরেকটি অধ্যায়ে পা রাখার উদ্দেশ্যে আমরা বিদায় নিচ্ছি। এই প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে চলে যেতে হবে এই ভেবে আজকের এই দিন আমাদের হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে চলে যেতে হবে এই ভেবেই আমার হৃদয় বারবার আবেগপ্রবণ হয়ে যাচ্ছে। ভেতর থেকে দুর্বল হয়ে যাচ্ছি বারবার। তবুও বিদায় নিতে হবে। বিদায় শব্দটি সকলের কাছেই অনেক কষ্টের। তবুও আমাদেরকে বিদায় নিতে হবে। এটিই হয়তো প্রকৃতির নিয়ম। যেকোনো কাজের অথবা যেকোন কিছুর শুরু যেমন রয়েছে ঠিক শেষও রয়েছে। আর শেষের মধ্যে দিয়ে বিদায়ের মতো ভারাক্রান্ত মুহূর্তে শুরু হয়। অত্যন্ত দুঃখ ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলতে হচ্ছে আজ আমাদের বিদায় অনুষ্ঠান। যদিও আমরা মনে করি এটা একটা বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কারণ মন থেকে চিরতরে বিদায় নেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। কিন্তু তারপরও এই বিদায় কষ্টের।

প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকঃ
দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই প্রতিষ্ঠানে পড়েছি এবং এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শিক্ষক আমাদেরকে বিভিন্ন বিষয় অত্যান্ত দক্ষতার সাথে পড়িয়েছেন তা আমরা কখনোই ভুলবো না। সকল শিক্ষকবৃন্দ আমাদেরকে তাদের জ্ঞান ভান্ডার হতে জ্ঞান দান করেছেন এবং আমাদেরকে একটি জাতির মেরুদন্ড হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। তাদের কাছে আমরা সকল শিক্ষার্থীরা চির কৃতজ্ঞ রইবো। তারা যদি আমাদের পাশে এভাবে না থাকতেন তাহলে আমরা শিক্ষাঙ্গনের ছোঁয়া পেতাম না। আপনারা ছিলেন বলেই আমরা শিক্ষাঙ্গনের মুক্ত ছড়াতে পেরেছি। এজন্যও আমরা আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। এছাড়া এখানে দীর্ঘ শিক্ষাজীবনে আপনাদের অনেক শাসন-বাড়নের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে যা সাময়িক বিরক্তিকর মনে হলেও এখন এই শেষ মুহূর্তে বুঝতে পারছি এটা আমাদের জন্য কতটা দরকারি ছিলো। আমার জানামতে আমি কখনও কোনও শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ করিনি। তবুও অযাচিত কারণে যদি আমার পক্ষ হতে কোন শিক্ষক কষ্ট পেয়ে থাকেন কিংবা আমাদের কোনো শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে যদি কোন কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে আমাদেরকে সন্তান মনে করে ক্ষমা করে দিবেন। কারন আমরা আপনাদের ভালোবাসা এবং আপনাদের জ্ঞানের আলোয় নিজেদেরকে আলোকিত করতে চাই।

এক মনিষী বলেছিলেন যে, ”The mediocre teacher tells, the good teacher explains, the superior teacher demonstrates, the great teacher inspires”

তাই সম্মানিত শিক্ষকগণের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কারণ তারা যদি আমাদেরকে নিয়ে স্বপ্ন না দেখতো তাহলে আজ আমরা এই জ্ঞান অর্জন করতে পারতাম না। আপনাদের কাছে আমাদের জন্য দোয়া এবং শুভকামনা চাইছি। যাতে করে আমরা আপনাদের স্বপ্নপূরণ করতে পারি এবং ভবিষ্যতে আরো উন্নতি করে দেশ ও জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারি। সেইসাথে আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারি। 

অনুজঃ
আমাদের অনুগামী ভাই ও বোনেরা; তোমাদের সাথে দীর্ঘ ৪ বছর ছিলাম। আমরা এই দীর্ঘ সময়ে একটি পরিবারের ভাই ও বোনের মত ছিলাম এবং খুব সুন্দর সময় কাটিয়েছি। অনেক সময় আমরা তোমাদেরকে বিভিন্ন কারণে শাসন করেছি। আমাদের শাসন তোমরা বড় ভাই-বোনের শাসনের মতো নিও এবং তোমরা ঠিক এভাবেই আমাদের স্নেহের আদরের এভাবেই থেকো। আমাদের ভালো ফলাফলের জন্য তোমরা দু'আ করিও এবং আমরা যাতে এই প্রতিষ্ঠানে সুনাম বয়ে আনতে পারি সেই দোয়া করিও। তাছাড়া আমরা যাতে আমাদের প্রত্যেক পরিবারের পিতা-মাতার যে স্বপ্ন রয়েছে আমাদেরকে নিয়ে তা যাতে পূরণ করতে পারি এই দো'আ করিও। আমাদের পক্ষ হতে তোমাদের কাছে একটি চাওয়া সেটি হচ্ছে তোমরা শিক্ষকবৃন্দদের সাথে কোন রকম বেয়াদবি করবে না এবং শিক্ষকদের সাথে ভালো আচরণ করবে, শিক্ষকরা তোমাদেরকে যে শিক্ষা দান করবে তা আহরণ করার চেষ্টা করবে এবং বাস্তবে তা ভালো কাজে প্রয়োগ করবে। আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদের সামনের পথ আরো আদর্শবান করে তোলার জন্য রয়েছে শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা।

শেষাংশঃ
আমরা বড় হয়। আরো বড় হয়। ছড়িয়ে পড়ি দেশে বিদেশে নিজেদের অন্ন সংস্থানের জন্য। পৃথিবী যেহেতু গোলাকার, তাই আমাদের মাঝে আবারো দেখা হবে। কথা হবে। এতেই আমরা সন্তুষ্ট থাকব। আজ শিক্ষাজীবনের একটি অধ্যায় সমাপ্ত করে পরের আরেকটি অধ্যায়ে পা রাখার উদ্দেশ্যে আমরা বিদায় নিচ্ছি। প্রিয় শিক্ষকগণ, আপনাদের দোয়া ও শুভকামনা চাই আমাদের জন্য। যেন আমরা সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পদার্পান করতে পারি। আমরা যেন আমাদের ভবিষ্যত জীবন আরো উন্নতি করে দেশ ও জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারি। আমরাও আপনাদের দেখিয়ে দেওয়া পথ ধরে এগিয়ে যেতে চাই।

পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের সকলের ইচ্ছা না থাকলেও আজকে আমাদের একটি অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বিদায় নিতে হচ্ছে। এই বিদায়ের মধ্য দিয়ে আমাদের জীবনের শিক্ষাঙ্গন এর একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। এই বিদায়ের মুহুর্তে আমার একটি কবিতা মনে পড়ে গেলোঃ-

” বিদায় মানে শেষ নয়,
নতুন শুরুর দিগন্ত,
আসবে ভোর নতুন
দেখবো সবার সফলতার বসন্ত “

“বিদায়ের ঘন্টা বেজে গেছে
আর যে সময় নেই,
ভালো থেকে প্রিয় প্রতিষ্ঠান
তোমাকে বিদায়”

” কত স্মৃতি হাসি উল্লাস মাখা দিন
মিশে আছে এইখানে,
প্রতিটি পাথর-বেঞ্চ-ঘণ্টা সবার মাঝে
আমাদের ভালবাসা,
আজ ছাড়িতে হবে এসব,
দিতে হবে বলি, একি ব্যাথা।
রচিত হবে স্মৃতির মাঠ, হবে কি আর কখনো এভাবে আসা?
হে প্রিয় আলয়, তোমায় বলি, করি শেষ আকুতি
আমাদের যেন ভুলিও না তুমি,
রেখো মনে চিরদিন।”

এই বিদায় চির বিদায় নয়। কারণ এই প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে আছে আমার জীবনের স্বর্ণাক্ষরে লেখা সুন্দর মুহূর্ত গুলো। শুধু যে আমার জীবনের সুন্দর মুহূর্ত গুলো যে এই প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে আছে তা নয় এ প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীদের জীবনে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের অসম্ভব সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত। এই কষ্টদায়ক বিদায় মুহূর্তে এর বেশি কিছু বলতে চাইছি না। সকল ছাত্র-ছাত্রীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি এবং সকলের কাছে আমাদের জন্য দোয়া চাইছি। উপস্থিত সকলের নেক হায়াত কামনা করছি। এখানে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি। সবাইকে ধন্যবাদ। আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। আদাব। জাজাকাল্লাহ খাইরান।
লেখকঃ মোঃ এমরান হোসেন 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Khichuri